আজ রবিবার, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিটিভির আনন্দ মেলার আনিসুল হক .

অনলাইন ডেস্ক :আনিসুল হক চলে গেছেন না ফেরার দেশে। কিন্তু বেঁচে আছেন অগণিত মানুষের হৃদয়ে মহান এক মানুষ হয়ে। ছিলেন নগরপিতা। তাই ব্যস্ত থেকেছেন নগরের ভালো-মন্দ দেখভালে। আর ব্যবসায়ী হিসেবে সামলেছেন বাণিজ্যের এক গতিময় জগত। কিন্তু সবকিছুর পাশাপাশি তিনি ছিলেন ঔজ্জ্বল্যে ভরপুর সংস্কৃতিমনা এক আলোকিত মানুষ।
যার কর্মের দ্যুতি এ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলো বিলিয়েছে দুর্নিবার। বিশেষ করে টিভি অনুষ্ঠান নির্মাণের এক দুর্দান্ত কারিগর ছিলেন আনিসুল হক। যার ব্যতিক্রমী এবং নান্দনিক উপস্থাপনায় এ মাধ্যমের বেশ কিছু অনুষ্ঠানই পেয়েছে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। আকর্ষণীয় সব বিষয়কে ঘিরে তৈরি সেসব অনুষ্ঠান আনিসুল হকের বাঙময় উপস্থাপনায় হয়ে উঠেছে দারুণ উপভোগ্য। অনুষ্ঠানগুলোর প্রতিটিই ছিল বৈচিত্র্যে ভরপুর। এক অনুষ্ঠানের সঙ্গে অন্যটির মিল খুঁজে পাওয়া যেত না কোনোভাবেই। আনিসুল হক নিজেই মানসম্পন্ন নানান আইটেম দিয়ে মালা গাঁথতেন সেসবের বেশিরভাগ। ১৯৭৯ সাল থেকে তার বিচরণ শুরু হয় টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার জগতে। তিনি দুই বা আড়াই বছর একটি অনুষ্ঠান করার পর সেটি বন্ধ করে দিতেন। আবার বেশ কিছুদিন বিরতি দিয়ে শুরু করতেন নতুন আরেকটি। তিনি একটানা দীর্ঘ বছর কখনো কোনো অনুষ্ঠান করেননি। তার করা অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিরিজ প্রোগ্রাম হচ্ছে ‘অন্তরালে’, ‘এখনই’ ও ‘বলা না বলা’। এর পরে তিনি আর কোনো সিরিজ প্রোগ্রাম করেননি। তবে মাঝে-মধ্যে ছোট ছোট বিশেষ অনুষ্ঠান করতেন। সেসবের বেশিরভাগেরই ডিজাইন তিনি নিজে করতেন। অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ছিল ‘জলসা’। বিটিভির বেশ কয়েকটি ঈদের ‘আনন্দমেলা’ও তিনি করেছিলেন। একুশে টিভি যখন টিরেসট্রিয়াল ছিল তখন ঐ চ্যানেলের জন্য তিনি ‘ঈদের ঢোল’ নামে একটি অনুষ্ঠান করেছিলেন। এনটিভি ও এফবিসিসিআই আয়োজিত বাজেট-পূর্ববর্তী ভাবনা নিয়ে দেশের প্রথম টেলিভিশন অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেন তিনি। আর তার সবচেয়ে সাড়া জাগানো অনুষ্ঠানটি ছিল ‘সবিনয়ে জানতে চাই’। টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ছাড়াও আনিসুল হক অনেকটা পথই হেঁটেছেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নানা সেবামূলক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থেকে। এ অঙ্গনের বিপদে আক্রান্ত মানুষদের জন্য সবসময়ই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতেন তিনি। এ কাজটি যাতে গোছালোভাবে করা যায় সে লক্ষ্যে সমাজের নানা শ্রেণির বিশিষ্টজনদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম। এখান থেকে লাকী আখান্দ, আলাউদ্দিন আলী, শাম্মী আখতার- এদের তিনি এককালীন আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। আর বিভিন্ন দুস্থ বা রোগগ্রস্ত শিল্পীকে যার যেমন প্রয়োজন অনুযায়ী কাউকে মাসিক টাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন, কাউকে দিয়ে যাচ্ছিলেন চিকিৎসার খরচ। শিল্পীদের জন্য এ ধরনের কাজ আনিসুল হকই বাংলাদেশে প্রথম করেছিলেন, যা দারুণভাবে প্রশংসা পেয়েছে সর্বমহলে। নানা ধরনের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে টেলিভিশন মাধ্যমটির প্রতি অসীম ভালোবাসা তৈরি হয় আনিসুল হকের। আর এ কারণেই ‘নাগরিক টিভি’ নামে একটি টেলিভিশন চ্যানেল চালুর প্রায় সব প্রক্রিয়া গুছিয়ে এনেছিলেন তিনি। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এ মানুষটির মৃত্যুতে শিল্পীমহলে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ফেসবুকের নিজ নিজ ওয়ালে তারা জানাচ্ছেন সে শোক। সুরকার-সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী লিখেছেন, তুমি মরনি ভাই। আমরা প্রাণহীন হয়ে রইলাম। বেহেশতে আল্লাহ তোমাকে স্থান দান করুন। জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ লিখেছেন, আনিস এভাবে তুমি চলে গেলে! আমি নিতে পারছি না বন্ধু। নাট্যকার-নির্মাতা ফেরদৌস হাসান লিখেছেন, আমার ধারণা মানুষ মরলেই শুধু মানুষ হয়। তাই কারো মৃত্যু সংবাদে আমি খুব বিচলিত হই না। কিন্তু আজ চোখ দুটোকে মানাতে পারছি না। ওরা কাঁদছে। ঝরঝর করে। একটু শব্দ করে কাঁদতে পারলে ভালো হতো। বুক টনটন করছে! আল্লাহ শক্তি দাও! ব্যান্ডতারকা আইয়ুব বাচ্চু লিখেছেন, শুধু হারিয়ে ফেলছি একে একে। আপন বলতে যারা ছিলেন আমাদের চারপাশে ছায়া হয়ে এমন ভীষণ শ্রদ্ধার আরো একজন আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আল্লাহ আপনাকে বেহেশত নসিব করুন। আমীন। অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি লিখেছেন, আপনাকে বড্ড বেশি প্রয়োজন ছিল আমাদের সবার! ভাবতে পারছি না…! অভিনেতা অপূর্ব লিখেছেন, খুব কষ্ট হচ্ছে…খুব… মানতে পারছি না… একদম না…।